বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করা যায় কী?
প্রকাশিত : ২৩:০৪, ২৫ এপ্রিল ২০১৮
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দেওয়া প্রসঙ্গে তর্ক বিতর্ক এখন চরমে। রাজনৈতিক বক্তব্যের তোরজোরে নতুন যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তা হল বাংলাদেশের আইনমতে, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব কী আসলেই বর্জন করা যায়? আর যদি যায় তাহলে তাঁর আইন কী হতে পারে সে নিয়েও আসে বিস্তর বিতর্ক।
পাসপোর্ট জমা দেওয়া বিতর্ক ওঠার পর বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয় যে, তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। বিএনপির এমন বক্তব্যের পর গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বার্তা সংস্থা বিবিসিকে বলেন, “আমরা সবাই জানি যে একটা দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে হলে তার মূল দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে হয়”।
শাহরিয়ার আলমের এমন বক্তব্যের পর নাগরিকত্ব বর্জন বিষয়ে বাংলাদেশের আইন নিয়ে কৌতূহলী হয়েছেন অনেকেই।
২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন, ২০১৬-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীসভা। সেটি সংসদে উত্থাপনও করা হয়েছে। তবে খসড়াটি এখনও আইন হিসেবে পাস হয়নি সংসদে।
ফলে বাংলাদেশে নাগরিকত্ব প্রদান এবং নাগরিকত্ব বাতিলসহ এ ধরণের বিষয়গুলো `দ্য সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট, ১৯৫১` এবং `দ্য বাংলাদেশ সিটিজেনশিপ টেম্পোরারি প্রভিশন্স অর্ডার, ১৯৭২` এর আলোকে বিবেচনা করা হয়।
বাংলাদেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, “বিদেশে অবস্থানরত কোন ব্যক্তি যদি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করতে চান, তাহলে তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় বরাবর আবেদন করতে হবে। এ সংক্রান্ত নির্দিষ্ট একটি ফর্ম আছে মন্ত্রণালয়ে। যাচাই-বাছাই করে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত জানিয়ে প্রত্যয়ন দেয় যে, আবেদনকারীর নাগরিকত্ব বাতিল বা বর্জন করা হয়েছে”।
এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে যখন কোন ব্যক্তি জার্মানি বা সিঙ্গাপুরের মত কোন দেশের নাগরিক হতে চায়। ঐ দেশ দুটিতে নাগরিকত্ব পাবার শর্ত হিসেবে নিজ দেশের নাগরিকত্ব বর্জন করতে হয়।
তবে, ভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব পাবার বিষয় না থাকলে বিষয়টি একই রকম নয়।
বাংলাদেশে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইনজীবী ড. কাজী আকতার হামিদ বলেছেন, “কোন ব্যক্তি যদি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ বা বর্জন করতে চান, তাহলে প্রথমেই তাকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট জমা দিতে হয়”।
“তবে, সেই ব্যক্তি যদি জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হন তাহলে যেকোনো সময় নিজের পাসপোর্ট পুনরায় `ক্লেইম-ব্যাক` অর্থাৎ ফিরে চাইতে পারবেন তিনি”।
কিন্তু জন্মসূত্রে অর্থাৎ পিতা-মাতার সূত্রে অথবা বাংলাদেশ ভূমিতে জন্মানোর কারণে নাগরিক না হলে, সেক্ষেত্রে কি করা হবে তা পরিষ্কার বলা নেই। অর্থাৎ পাসপোর্ট সারেন্ডার করলে আর ফেরত পাওয়া যাবে কিনা সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু এই আইনে উল্লেখ নেই বলেও জানান এই আইনজীবী।
সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মো. হামিদ বলেন, “যখনি কোন ব্যক্তি তার পাসপোর্ট সারেন্ডার করে, সে রেফিউজি বা শরণার্থী হয়ে যায়। আর ১৯৪৫ সালের জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী কয়েকটি কারণে লোকে শরণার্থী হয়। যেমন, রাজনৈতিক বিচারে নিপীড়নের শিকার হবার আশংকা থাকলে”।
“এক্ষেত্রে একেক দেশে একেক নিয়ম, কোন দেশ পাসপোর্ট নিয়ে নেয়, কোন দেশ নেয় না। যেমন, জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলে পাসপোর্ট সারেন্ডার করতে হয়। কিন্তু যুক্তরাজ্যের বেলায় নিয়ম তা নয়”।
“এমনকি বাংলাদেশের কোন নাগরিক যদি যুক্তরাজ্যের নাগরিক হন, অর্থাৎ তিনি যদি দ্বৈত নাগরিক হন, তাহলে তাকে তার কোন পাসপোর্টই সারেন্ডার করতে হবে না”- জানান মো. হামিদ।
এ নিয়ে ২০০৮ সালে সরকার এক গেজেট নোটিফিকেশন জারি করে।
আবার দ্বৈত নাগরিকত্বের ক্ষেত্রেও একেক দেশে একেক আইন বলবত থাকতে দেখা যায়। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী যখনই কোন ব্যক্তি দেশটির নাগরিক হন, ঐ ব্যক্তির নিজ দেশের নাগরিকত্ব বাতিল করতে হয়।
কিন্তু বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, ঐ ব্যক্তির নাগরিকত্ব বাতিল হয় না।
এছাড়া, বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক হবার বা থাকার যোগ্য থাকবে না, যদি সেই ব্যক্তি দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের ক্ষেত্র বাদে কোনো বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আনুগত্য প্রকাশ করে।
এছাড়া বিদেশী রাষ্ট্রের কোনো বাহিনীতে যোগদান করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা অন্য কোনোভাবে উক্ত বাহিনীকে সহায়তা করা কিংবা এমন কোনো দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করা যে রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ যুদ্ধে লিপ্ত ছিল বা আছে---এমন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বাতিল হয়ে যাবে কোন ব্যক্তির।
এছাড়া ১৮ বছর বয়সী যেকোনো প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি হলফনামার মাধ্যমে নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করতে পারবেন।
তবে দেশ যদি যুদ্ধে লিপ্ত থাকে সে সময় এই হলফনামার বিধান স্থগিত থাকবে। এভাবে কেউ নাগরিকত্ব ত্যাগ করলে তার সন্তানেরও নাগরিকত্বের বাতিল হবে।
এছাড়া সরকার সময় সময় আদেশ দিয়ে কোনো ব্যক্তির নাগরিকত্বের অবসান ঘটাতে পারে।
*বিবিসি বাংলা অবলম্বনে
//এস এইচ এস//এসি
আরও পড়ুন